লকডাউনে টানা একবছর কাজ করতে করতে বোরিং হয়ে গেছিলাম । কক্সবাজার ট্যুরের প্লান ছিলো ডিসেম্বরে । কিন্তু ডিসেম্বরের দিকে দেখা গেলো টানা কয়েকদিন সরকারী ছুটি । ফলাফল হোটেল, রিসোর্স সবকিছুতেই সিট বুকড সাথে স্পট এরিয়াগুলা হয়ে গেছে গুলিস্থান । তাই প্লান চেঞ্জ করে ফিক্সড করলাম ফেব্রুয়ারীর ৬ তারিখ শনিবার । শনিবার ট্যুর শুরু করাতে স্পটে তেমন ভীড় থাকে না। ছুটির দিনেই যত সমস্যা । ফ্রিল্যান্সিং কাজের এটাই সবচেয়ে বড় সুবিধা যেকোন সময় ল্যাপটপটা নিয়েই বের হওয়া যায় । কাউকে জবাবদিহি করতে হয় না । আমার ট্যুরের একমাত্র সঙ্গী ছিলেন জুয়েল ভাই (Front End Designer at Lurn). জুয়েল ভাই আগে থেকেই মারমেইড রিসোর্ট বুকিং দিয়ে রেখেছিলেন । আমি এয়ার টিকেট নিয়ে রেখেছিলাম US Bangla Airlines এর ।
প্রথম দিন – ৬ ফেব্রুয়ারী শনিবার
আমাদের জামালপুর জেলা বা আশপাশে এয়ারপোর্ট নেই । তাই ঢাকা থেকেই আমাদের চলাচল করতে হয় । ৬ তারিখ বিকেল ৪ টার তিস্তা ট্রেনে রওনা হলাম ঢাকায় । রাত ৮ টার দিকে এয়ারপোর্ট স্টেশনে নেমেই চলে গেলাম হোটেলে । নামটা মনে নেই । কাছাকাছিই ছিলো এয়ারপোর্ট থেকে। ব্যাগব্যাগেজ রেখে ইফুডে খাবার অর্ডার দিয়ে নিচে নেমে এলাম রাজা মামার দোকানের চা খেতে।
চা শেষ করতে করতেই খাবার হাজির । নিয়ে সরাসরি হোটেলে এসে খেয়েদেয়ে একটা ঘুম ।
দ্বিতীয় দিন – ৭ ফেব্রুয়ারী রবিবার
সকালে ঘুম থেকে উঠেই হেটেই চলে গেলাম এয়ারপোর্টে । ৮ টার ফ্লাইট পিছিয়ে করলো ৯ টা । সিম্পল চেকিং শেষেই বোর্ডিং পাস নিয়ে উঠে গেলাম বিমানে । করোনার কারনে নাস্তার বদলে দিলো একটা পানির বতল । মেজাজ যা খারাপ হইছিলো । এমনিই নাস্তা করে উঠি নাই সকালে । বোয়িং বিমানে শব্দ একটু বেশিও মনে হয় । এয়ারপডের নয়েস কেনসেলেশন ভালো কাজে দিছে । ১০ টায় কক্সবাজারে ল্যান্ডিং ।
এয়ারপোর্ট আগে থেকেই আমাদের জন্য সিএনজি ওয়েট করতেছিলো । Mermaid Resort থেকে ওরাই ম্যানেজড করে পাঠিয়ে দিছিলো । লোকাল ড্রাইভারগুলা আজগুবি ভাড়া হাকে ।
সিএনজিতে লফিন মোড়ে গিয়ে প্রথমেই নাস্তা করে নিলাম । এরপর মেরিন ড্রাইভ রোড ধরে চলতে থাকলাম । হিমছড়ি বিচে নেমে একটু সৈকতে হেটে আবার রওনা দিলাম রিসোর্টের দিকে ।
Mermaid Eco Resort এ আসার পরই ফুলের মালা আর ডাবের পানি দিয়ে অভ্যর্থনা জানাইলো । স্টাফরা অনেক বিনয়ী । একম সুন্দর একটা পরিবেশ ।
কিছুক্ষণ ওয়েট করার পর চলে আসলাম আমাদের বুকিং করা রুমে। রিসোর্টের সামনে নাম লিখে লাখছিলো । এরপর ফ্রেশ হয়ে রিসোর্টের রেস্টুরেস্টে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম । মাত্রাতিরিক্ত বিল নিছে সবকিছুর । শুধু দুইজনের দুপুরের খাবারেই চলে গেছে ২০০০ টাকার মতো । এখানে ক্রেডিট কার্ড পাঞ্চ করার সুবিধা আছে । আমাদের নগদ ক্যাশ খুব কমই ব্যবহার হয়েছে ।
খাবার খেয়ে বিকেলের দিক চলে আসলাম ইনানি বিচে । একদম লোকজন নেই । অথচ ছুটির দিনে এখানে গুলিস্থান হয় ।
ইনানি বিচ ঘুরে এসে Mermaid Resort এর রেস্টুরেন্টে খেয়ে রাতে একটু হাটাহাটি করে চলে আসলাম রুমে । বারান্দায় সুন্দর একটা ব্যবস্থা করছে রিলাক্সের জন্য । এখানে শুয়ে সাগরের গর্জন, মৃদু আলো, কোলাহলহীন জোস একটা পরিবেশ । ১২ টার দিক রুমে এসে ল্যাপটপ বের করে কিছু কাজ করলাম । ১ টার দিক দিলাম এক ঘুম ।
তৃতীয় দিন – ৮ ফেব্রুয়ারী সোমবার
সকালে উঠেই বুফে নাস্তা করে নিলাম রিসোর্টেই । এরপর আমি কিছু কাজ করলাম । একটা ডেডলাইন ছিলো প্রজেক্টের । শেষ করেই চেক আউট করে চলে আসলাম কক্সবাজার শহরে । Hotel SeaCox এ উঠলাম । ব্যাগ রেখেই চলে গেলাম প্যরাসাইক্লিং করতে হিমছড়ির দিকে । বাতাস সমস্যার কারনে একটা টিম বন্ধ রাখছে । আরেকটা টিম করতেছে কিন্তু টাইম বেশি দিবে না । ৫ মিনিটের মতো । কনফার্ম করতেই দ্রুত রেডি হয়ে শুরু হইলো আমার পর্ব । জোস একটা অভিজ্ঞতা ।
এরপর চলে আসলাম কক্সবাজার শহরে । সুগান্ধা বিচে রাত পর্যন্ত ঘুরে হোটেলে চলে আসলাম । এরমধ্যে নিউজ এলো ভার্সিটির ফরম পুরন করতে হবে কালকে । মেজাজটা সেইরকম খারাপ হইলো । সারাজীবন ক্লাসের খোজ নাই আর একদিন ট্যুরে আসছি দিছে ফরম পুরনের নোটিশ । সকালের ফিরতি এয়ার টিকেট করে দিলাম একটা ঘুম ।
চতুর্থ দিন – ৯ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার
সকালে হোটেলের বুফেটে নাস্তা করে সব গোছিয়ে চলে আসলাম এয়ারপোর্টে । ১১:৩০ টার ফ্লাইট চেঞ্জ হইলো ১ টায় । এদিকে ঢাকা থেকে সৈয়দপুরের টিকেটও করা ২:৩০ এর । ঢাকায় এসেই আবার চেকিং, বোর্ডিং পাস নিয়েই সৈয়দপুর ফ্লাইটে । ৪ টার আগে আগে সৈয়দপুর পৌছাইলাম । আমার এক গৃহপালিত ড্রাইভার আছে রংপুরের। ফোন দিছিলাম ঢাকায় থাকতেই । সৈয়দপুর এয়ারপোর্ট নেমেই দেখি দাড়িয়ে আছে । সাড়ে ৫ টার দিক চলে গেলাম একবারে ভার্সিটিতে ।
বিমান থেকে যমুনা নদী । US Bangla বিমানের জানালার কন্ডিশন থেকে বমি আসার মতো । জীবনেও মনে হয় পরিষ্কার করে না ।
কেমন খরচ
এটা অনেকটা রিলাক্স ট্যুর ছিলো তাই কত খরচ গেছে হিসাব করি নি ।
টোটাল এয়ার টিকেট খরচ – ৯,৯০০
Mermaid Resort + Seacox – ৬৫০০+ ২২০০
খাবার খরচ – ৪০০০ (আনুমানিক)
প্যারাসাইক্লিং – ২২০০
ভাড়া সহ টুকিটাকি সব মিলে ৩০ হাজারের মতো খরচ । নতুন চালু হওয়া মেরিন ড্রাইভ ট্যুরিস্ট বাস ও সেন্টমার্টিন প্লান ছিলো । হয়তো পরে সেটা হবে ।